৯ জুলাই ২০২৫ - ০১:৫৫
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠক -আসল পরিকল্পনা এখন প্রকাশিত হয়েছে।

ট্রাম্প–নেতানিয়াহুর পুরোনো খেলা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়ানোর ।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন। সেখানে তাঁরা আবারও গাজা উপত্যকা থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক অন্যত্র পাঠানোর বিতর্কিত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরই বিতর্কিত এই পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।


ইসরায়েলের উগ্রবাদী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একসঙ্গে কিছু দেশের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে ফিলিস্তিনিদের ‘ভবিষ্যৎ ভালো হয়’। তাঁর ইঙ্গিত ছিল, গাজার মানুষ চাইলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে পারে।

বছরের শুরুতে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে ওই অঞ্চলকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ (মধ্যপ্রাচ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উপকূলীয় এলাকা) বানানো যেতে পারে। তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

আল–জাজিরার জর্ডানের আম্মানের সাংবাদিক হামদাহ সালহুত বলেন, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কথা বলে আসছে। এটাকে তারা ‘স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ’ বলে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি একধরনের জাতিগত নিধনের পরিকল্পনা।

সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন পিনকাস বলেন, কে কী বলল, সেটা দিয়ে বোঝা যাচ্ছে না যে সত্যিই কোনো বাস্তব পরিকল্পনা আছে। প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট অনেক সময় মুখে অনেক কথা বলেন। পরে তা কেবল মতামত হয়ে থাকে, বাস্তব পরিকল্পনা নয়।

অ্যালন বলেন, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজায় ‘ফিলিস্তিনি রিভেরা’ হবে। কিন্তু ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে তাড়ানো হবে। অ্যালন আরও বলেন, ‘মার্কিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরির চেষ্টা করলেও সেটা বাস্তবে কার্যকর হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। বরং এটা গাজা নিয়ে ভবিষ্যতের কোনো শান্তিচুক্তিকে অনিশ্চিত করে তুলবে।

ট্রাম্প–নেতানিয়াহুর বৈঠকের মধ্যেই কাতারে ইসরায়েল ও হামাস টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পরোক্ষ আলোচনা করেছে। সেখানে আলোচনায় আছে—৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, হামাসের কাছে থাকা বন্দীদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং পুরো যুদ্ধ শেষ করার উপায়।

তবে কথা হচ্ছে, এই যুদ্ধবিরতির পরে কি যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হবে? হামাস বলছে, তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ সরানোর শর্তে সব বন্দীর মুক্তি দিতে প্রস্তুত।

কিন্তু নেতানিয়াহু বলছেন, হামাস আত্মসমর্পণ করলে এবং গাজা ছেড়ে গেলে কেবল যুদ্ধ শেষ হবে। ইসরায়েলের এই শর্ত হামাস মানতে রাজি নয়।

নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, এই সপ্তাহেই হয়তো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি পূর্ণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মানেন না এবং ইসরায়েল গাজার ওপর সব সময় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।

গতকাল সোমবার কাতারের বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। তবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ কাতারে আলোচনায় যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে।

Your Comment

You are replying to: .
captcha